সংগঠনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার: জেবিবিএ
Published On Dec 21, 2021
মো: আলমগীর সরকার, বিজয় টেক:: আমি বাংলাদেশী কমিউনিটিকে ভালোবাসি, বাংলাদেশীরা গ্রেট কমিউনিটি, তারাও আমেরিকাকে গ্রেট করে তুলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশীরা কঠোর পরিশ্রমী, শান্তিপ্রিয়। বাংলাদেশী ইমিগ্রান্টরা আমেরিকার উন্নয়নে কঠোর শ্রম দিচ্ছেন, তারা আমেরিকান স্বপ্নের অনন্য উদাহরণ।
জেবিবিএ’র ‘হারুন ভূইয়া ও ফাহাদ সোলায়মান’ নেতৃত্বাধীন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (জেবিবিএ)-এর এই অংশের ২০২২-২০২৪ সালের নবনির্বাচিত কমিটির বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের মেজরিটি লীডার সিনেটর চাক শুমার উপরোক্ত কথা বলেন। সিনেটর চাক শুমার রাত পৌনে ১০টার দিকে অনুষ্ঠান স্থলে পৌছেন এবং আধা ঘন্টার মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রাত সোয়া ১০টার দিকে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন। এসময় তিনি হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য প্রদান ছাড়াও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, ফটো সেশনে অংশগ্রহণ এবং জেবিবিএ প্রদত্ত ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
গত শুক্রবার (০৪ মার্চ ২০২২) উডসাইডস্থ গুলশান ট্যারেস পার্টি হলে আয়োজিত অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সিনেটর চাক শুমার জেবিবিএ-কে একটি ‘গ্রেট অর্গানাইজেশন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেবিবিএ’র অন্যতম পরিচালক এম কে রহমান। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরবর্তীতে নতুন কর্মকর্তাদের শপথবাক্য পাঠ করান জেবিবিএ’র পরিচালক মন্ডলীর প্রধান ও সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক মোহাম্মদ পিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেবিবিএ'র নতুন কমিটির কর্মকর্তাগণকে সিনেটরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান। এ সময় বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এট লার্জ ও জেবিবিএ’র উপদেষ্টা এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং সিটি মেয়র অফিসের ডেপুটি কমিশনার চৌহান। জেবিবিএ’র সভাপতি হারুন ভূইয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি মুনসুর চৌধুরী, সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলম নমী এবং মোহাম্মদ আজাদ, কোষাধ্যক্ষ সেলিম হারুন, উপদেষ্টা মইনুল ইসলাম, ডা. তৌহিদ শিবলী, সারোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মীর নিজামুল হক প্রমুখ এসময় মঞ্চে ছিলেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো এবং জেবিবিএ’র পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দেয়া হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ এবং জেসিকা গঞ্জালেজ, সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণানন, কমিউনিটি বোর্ড সভাপতি ফ্যাঙ্ক, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ও বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী ও আহসান হাবিব এবং মোহাম্মদ পিয়ার প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে সিটের চাক শুমার জানতে চান যে, ‘আই লাভ ইউ’-এর বাংলা কি? এসময় তার পাশ থেকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে দিলে তিনি তা বলার চেষ্টা করেন। এসময় হল জুড়ে হাসির রোল পড়ে। চাক শুমার তার বক্তব্যে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষরা স্মল বিজনেস করতো। অনেকেই নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ছোট-মাঝারি বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির ক্যাব (ট্যাক্সি) ড্রাইভারের বড় একটি অংশ হচ্ছেন বাংলাদেশী। তারা যাতে অধিক উপার্জনে সক্ষম হন সে জন্য আমি সব সময় সরব থাকি। কারণ, আমার শশুর ক্যাব ড্রাইভার ছিলেন। তাই আমি জানি কতটা কষ্ট করতে হয় ড্রাইভারদের। তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাকেও সারাটি জীবন কঠোর শ্রম দিতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
সিনেটর চাক শুমার বলেন, ভিন্ন ভাষা এবং কালচারের লোক হওয়া সত্বেও অনেক দূর থেকে আপনারা এই আমেরিকায় এসেছেন কারণ, আপনারা নিজের জীবনকে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে তুলতে চান এবং সন্তানদের ভবিষ্যত সুন্দর করতে চান। আর এজন্য সকলকে অনেক বেশী শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ ঘটাতে হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই আপনারা জ্যাকসন হাইটসকে উন্নত করছেন, কুইন্সকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন, নিউইয়র্ককে উন্নত থেকে উন্নতর করছেন। এভাবেই আমেরিকাকেও উন্নত করছেন।
সিনেটর শুমার বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে আমি পিপিপি (পে-চেক প্রটেকশন প্রোগ্রাম) লোন বিল লিখেছি এবং সিনেটে তা পাশ হয়েছে। এই লোন কখনোই ফেরৎ দিতে হবে না যদি শর্ত অনুযায়ী ব্যয় করা হয়। আমার ধারণা, বাংলাদেশীরাও সেই অর্থ-সহায়তা পেয়েছেন। এ সময় সকলেই জানান যে, তারা সেই অর্থ পেয়েছেন।
বাংলাদেশী-আমেরিকান নুসরাত চৌধুরীকে ফেডারেল জজ হিসেবে নিয়োগের কথা উল্লেখ করে সিনেটর চাক শুমার বলেন, কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের কল্যাণে আমি সবকিছু করতে বদ্ধ পরিকর।
আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন কমিটির কর্মকর্তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান জেবিবিএ’র পরিচালক পর্ষদের অন্যতম সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ পিয়ার।
অভিষক্তরা হলেন: সভাপতি হারুন ভূঁইা (খামার বাড়ী), সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর চৌধুরী (হাটবাজার), সহ-সভাপতি বাবু খান (প্রিমিয়াম সুপার মার্কেট), আবু নোমান শাকিল (ইত্যাদি বাজার), মোহাম্মদ আলম নমি (এক্সক্লুসিভ অব পিরান), জেড আর চৌধুরী লিটু (মামা’স রেস্টুরেন্ট), নুরুল আমিন বাবু (ট্রাই বরো রিয়েলিটি) ও মো. আজাদ (লিবার্টি রেনোভেশান), সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান (ফাউমা), যুগ্ম সম্পাদক মো: কাশেম (মাদানী ডিস্ট্রিবিউটার) ও শাহরিয়াার আরিফ (নবান্ন রেস্টুরেন্ট), কোষাধ্যক্ষ সেলিম হারুন (কর্ণফুলী ট্রাভেলস), সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বাদশা (এনওআই ডেলি অ্যান্ড গ্রোসারী), সাংস্কৃতিক সম্পাদক এম আর খন্দকার সান্টো (ডিটিএনওআই), সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন (বিডি ওয়ারলসে অ্যান্ড কমিনিকেশন্স), দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা তপন, প্রকাশনা সম্পাদক শাহ চিস্তি, প্রচার সম্পাদক সুবল দেবনাথ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নিলুফার শিরীন, সদস্য কামরুজ্জামান বাচ্চু, সাজ্জাদ হোসেন, ইসতিয়াক রুমি, সনাতন শীল, মোরশেদ এস এম মাসুদ, মোহাম্মদ ইদ্রিস, আবদুল হামিদ, সাখাওয়াত বিশ্বাস, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শফিউদ্দিন মিয়া, এফইএমডি রকি, তৌহিদুল ইসলাস রনি, আমনি মেক, শ্যামল সি নাথ আফতাব জনি ও জশি চৌধুরী।
উপদেষ্টা পরিষদ : প্রধান উপদেষ্টা এম এ আজিজ (ফসাল ডেভলপমেন্ট), ফরহাদ রেজা (বাংলাদেশ প্লাজা), নাজমুন নাহার রহমান (মান্নান হালাল সুপার মার্কেট), বদরুল হক (ফুড ডাইনেস্টি), সামিউল হক (সাগর চাইনিজ), এমকে রহমান মাহমুদ (রহমানীয়া ট্রাভেলস), সোহাগ আজম (ইটজি চাইনিজ), জাকির এইচ চৌধুরী (ইয়র্ক হোল্ডিং রিয়ালটি), রুহুল আমিন সরকার, মঈন চৌধুরী (এটর্নী এট ল) ও আজিজুল চৌধুরী মাসুম (মুন লাইট গ্রিল চিকেন)।
পরিচালক পর্ষদ : মোহাম্মদ পিয়ার (পিয়ার ট্যাক্স). কাজী মন্টু (কে, প্যারালিগ্যাল), মহসিন মিয়া (প্লাটিনাম ড্রাইভিং স্কুল), আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম (ডিসেন্ট মার্ট আইএনসি), কামরুজ্জামান কামরুল (দেশি ফুড), মহসিন ননী (হাট বাজার রেস্টুরেন্ট), কাজী শামসুদ্দোহা (এন ওআই এম এস), আনোয়ার জাহিদ (সানফ্লাওয়ার মাল্টি সার্ভিস), হোসেন সোহেল রানা (অবকাশ), রাশেদ আহমেদ (চ্যানেল আই), মোশারফ হোসেন এবং এম উদ্দীন আলমগীর (উদ্দিন আত্তার কর্পোরেশন)।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নৈশ ভোজ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন সহ চন্দন চৌধুরী, কামরুজ্জামান বকুল, রোকশানা মির্জা প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। যন্ত্রে ছিলো মাটি ব্যান্ড।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলম নমী, রুহুল আমীন সরকার ও সোনিয়া। সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন।